Friday, March 21, 2014

ট্রাইপড কেন ব্যবহার করবেন

ক্যামেরা নির্মাতা কিংবা লেন্স নির্মাতা তাদের ষ্ট্যাবিলাইজেশনের বর্ননা এমনভাবে দেন যেন আপনি ভুমিকম্পের সময় ছবি উঠালেও তার প্রভাব পড়বে না ছবিতে। আপনি নিখুত ছবি পাবেন। যারা ছবি উঠান তারা খুব ভাল করেই জানেন বাস্তবতা আসলে কি।
তাদের বক্তব্য একেবারে ভুল সেকথা বলা হচ্ছে না। ষ্ট্যাবিলাইজেশন থাকা আর না থাকার মধ্যে পার্থক্য অনেকখানি। তারপরও, ষ্ট্যাবিলাইজেশন সব প্রয়োজন মেটায় না। বিশেষ বিশেষ সময়ে আপনার প্রয়োজন ট্রাইপড নামের একটি বস্তু।
প্রথমে ষ্ট্যাবিলাইজেশন বিষয়টি কি একটু জেনে নেয়া যাক। আপনি যখন ছবি উঠান তখন সাটার রিলিজ চাপ দেয়ার সময় কিছু সময়ের জন্য সেন্সরের সামনে থেকে সাটার সরে যায়, সেন্সরে আলো পড়ে এবং সামনে যাকিছু আছে সেটা আকা হয় সেখানে। এই সময় সেকেন্ডের হাজার ভাহের একভাগ থেকে শুরু করে কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত হতে পারে।
এই সময়ে যদি আপনার হাত কাপে (যা খুবই স্বাভাবিক) তাহলে তার প্রভাব পড়বে ছবিতে। হয়ত ছবিতে বিন্দুর ছবি উঠাচ্ছেন। ছবি উঠানোর এক মুহুর্তে বিন্দুটি এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় সরে গেল হাত কাপার কারনে। যার অর্থ আপনি ছবিতে দেখতে পাবেন বিন্দুটি এক যায়গার পরিবর্তে ঝাপসা হয়ে সরে গেছে। ছবির ধারালো প্রান্ত দেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা আপনি নিজেই যাচাই করতে পারেন। সাটার স্পিড যত কম থাকবে এটা ঘটার সম্ভাবনা তত বেশি। আবার দুরত্ব যত বেশি হবে, সামান্য হাতকাপার প্রভাবও সেখানে প্রকটভাবে দেখা যাবে। অথচ আপনার দুরের ছবিও তোলা প্রয়োজন, কম আলোতে ছবি উঠানোর জন্য সাটার স্পিড কম রাখাও প্রয়োজন।
ক্যামেরা নির্মাতারা এর সমাধান দেন নানারকম পদ্ধতি। সেন্সর সিফট ষ্ট্যাবিলাইজেশন, লেন্স বেজড ষ্ট্যাবিলাইজেশন, ডিজিটাল ষ্ট্যাবিলাইজেশন, ডুয়াল ষ্ট্যাবিলাইজেশন ইত্যাদি নানারকম নামে এই কাজ করা হয়। একে কোম্পানী আবার একই কাজকে ভিন্ন ভিন্ন নামে উল্লেখ করে। যেমন ক্যানন যাকে ইমেজ ষ্ট্যাবিলাইজেশন (আইএস) বলে নাইকন তাকে বলে ভাইব্রেশন রিডাকশন (ভিআর), ট্যামরন বলে ভাইব্রেশন কন্ট্রোল (ভিসি)। ষ্ট্যাবিলাইজেশনসহ লেন্সের দাম ষ্ট্যাবিলাইজেশনছাড়া লেন্স থেকে অনেক বেশি।
মুল কথা হচ্ছে আপনার হাত কাপার কারনে যতটুকু বিচ্যুতি ঘটেছে সেটা কমানোর জন্য লেন্স সরে যাওয়ার সাথেসাথেই আলো গ্রহন বন্ধ করে দেয়া। সেইসাথে কম আলোর সমস্যা দুর করার জন্য বিশেষভাবে সেটা প্রসেস করা। ফল হিসেবে সাধারনভাবে যেখানে কম সাটার স্পিড ব্যবহার করার কথা ষ্ট্যাবিলাইজেশন ব্যবহার করে তারথেকে বেশি সাটারস্পিড ব্যবহার করা যায়।
কিছুকিছু কম্প্যাক্ট ক্যামেরা আরো অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে। তারা খুব দ্রুত কয়েকটি ছবি উঠায়। তারপর সেগুলি হিসেব করে একটি ভাল ছবিতে পরিনত করে। এই ব্যবস্থা নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য। এসুযোগ এসএলআর কিংবা প্রফেশনাল ক্যামেরায় থাকে না।
ট্রাইপডের কথায় ফেরা যাক। ট্রাইপড অর্থ যার তিনটি পা। এটা তিন পা বিশিষ্ট ক্যামেরা ষ্ট্যান্ড। তিন পা এর সুবিধে হচ্ছে অসমতল যায়গাতেও অনায়াসে সোজাভাবে রাখা যায়।
ব্যবহারের নিয়ম, এর ওপর ক্যামেরা বসাবেন। ক্যামেরা আটকানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রাইপডে রাখা অবস্থায় সহজে ক্যামেরা ঘুরানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যামেরা সেকানে রেখে অন্ধকারের ছবিও যদি উঠান তাহলেও ক্যামেরা যেহেতু নড়বে না সেহেতু ছবি ঝাপসা হওয়ার কারন থাকবে না। অনেকে পুরো অন্ধকারেও ছবি উঠান এই পদ্ধতিতে যা নাইট ফটোগ্রাফি নামে পরিচিত।
ট্রাইপডের একটি সমস্যা হচ্ছে ক্যামেরার সাথে একেও বয়ে বেড়াতে হয়। এজন্য নানা আকারের ট্রাইপড পাওয়া যায়। বর্তমানে একেবারে ছোট, পকেটে রাখার মত ট্রাইপডও পাওয়া যায়। গরিলাপড নামের একধরনের ট্রাইপড চেয়ার থেকে শুরু করে গাছের ডাল পর্যন্ত যেকোন কিছুর সাথে আটকে রাখা যায়। এছাড়া মনোপড নামে একপাঅলা ষ্ট্যান্ডও রয়েছে। ব্যবহারের সময় এটা ধরে রাখতে হয়, তারপরও যথেষ্ট ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।
বর্তমানে ক্যামেরাগুলি ষ্টিল ফটোগ্রাফিতে সীমাবদ্ধ নেই, প্রায় সবগুলিকে ভিডিও ক্যামেরা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আর আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন টিভির ভিডিও যতটা স্পষ্ট আপনার করা ভিডিও ততটা স্পষ্ট বা স্থির না।
শুধুমাত্র ক্যামেরা বা লেন্সের ষ্ট্যাবিলাইজেশনের ওপর নির্ভর করে নিখুত ছবি পাওয়া যায় না। এজন্য ট্রাইপড একটি প্রয়োজনীয় বস্তু।
বাংলাদেশে ৩ হাজার টাকার মধ্যে যথেষ্ট ভাল মানের ফটোগ্রাফি/ভিডিও ট্রাইপড পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment