Friday, March 21, 2014

ভূমিকা - ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে

Compact vs SLR - ফিচার/ফাংশন - ক্যামেরা কেনার আগে - ক্যামেরা কেনার পরে - অটোমুডে ছবি - শেষ কথা

সাধারণ মানের একটি ডিজিটাল ক্যামেরা এখন আর বিলাসদ্রব্য নয় বরং প্রাত্যহিক জীবনের অত্যাবশ্যকীয় একটি বস্তু। ডিজিটাল ক্যামেরা দিন দিন সুলভ হয়ে আসছে। হাজার দশেক টাকায় এখন বেশ ভালো ক্যামেরা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্যামেরা দিনদিন সুলভ হচ্ছে এবং এর সাথে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ফীচার ও ফাংশন। তাই প্রতিদিন ডিজিক্যামের ব্যবহারকারীও বাড়ছে। নতুন/সাধারণ ব্যবহারকারী ও যারা নতুন ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে চান তাদের জন্য কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরার বেসিক ফাংশন ও ফিচার নিয়ে এই লেখা।

ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে
কনভেনশনাল ক্যামেরা মেকানিক্যাল ও ক্যামিকেল প্রসেসের উপর নির্ভর এবং আলো লেন্সের মাধ্যমে শার্টারের মধ্য দিয়ে এসে ফিল্মের উপর পড়ে। বিভিন্ন ধাপে রাসায়নিক প্রসেসের মাধ্যমে এই ফিল্ম থেকে ছবি প্রিন্ট হয়। ডিজিটাল ক্যামেরার প্রসেস হচ্ছে ইলেকট্রনিক এবং আলো এসে পড়ে CCD (Charge-Coupled Device) সেনসরের উপর। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক প্রসেসের মাধ্যমে পুর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ছবি তারপরে প্রিন্ট কপি। CCD/CMOS -র এই ডিজিটাল তথ্য (ছবি) সব ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যবহার সম্ভব।

Compact vs SLR
ডিজিটাল ক্যামেরাকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায়। Shoot and Point (Compact) ও SLR (Single Lens Reflex)। কমপ্যাক্ট ক্যামেরায় বেশিরভাগ ফাংশন অটোমেটিক যা ক্যামেরা নিজেই নিজস্ব প্রোগ্রামের আলোকে সেটিং করে। এসএলআরে এসব ফাংশন ব্যবহারকারী নিজেই সেটিং করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অবশ্যই ক্যামেরা ও ফটোগ্রাফী সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। SLR ক্যামেরার আকার, ওজন এবং দাম কমপ্যাক্ট ক্যামেরা থেকে বেশি হয়, এছাড়া আলাদা লেন্স ও ফ্লাস ব্যবহারের অপশন থাকে। এক কথায় এসএলআর ক্যামেরা হচ্চে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের জন্য। এই লেখাটি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তাই এখানে শুধু কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়েই আলাপ করব।

ডিজিটাল ক্যামেরার গুরুত্বপূর্ণ ফিচার/ফাংশন সমূহ

১। CCD (Charge-Coupled Device): সিসিডি ডিজিটাল ক্যমেরার একটি সিলিকন চীপ যেখানে ছবি রেকর্ড হয়। CCD বা CMOS সেনসর হচ্ছে ডিজিটাল ক্যমেরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দামী ডিভাইস। এটি মিলিয়ন পিক্সেলের সমন্বয়ে গঠিত। আলো যখন লেন্সের মধ্য দিয়ে এসে এই সেনসরের ফটোএকটিভ লেয়ারে আঘাত করে তখন ঐ লেয়ারের নিচের পিক্সেলে একটি বৈদ্যুত্যিক চার্জ উৎপন্ন হয়। আলোর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পিক্সেলের বৈদ্যুত্যিক চার্জ বিভিন্ন রকমের হয়। মিলিয়ন পিক্সেলের বৈদ্যুত্যিক চার্জগুলোর সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় একটি ডিজিটাল ছবি।
  কোন ডিজিটাল ক্যমেরার রেসুলেশন কত মেগাপিক্সেল তা দিয়ে ঐ ক্যামেরার সেনসরের ক্ষমতাকেই বুঝায়। যত বেশি মেগাপিক্সেল তত বড় প্রিন্ট আউট নেয়া যাবে ছবির মান অক্ষুন্ন রেখেই। ইদানীং অনেকে এই মেগাপিক্সেলকে ক্যামেরার স্ট্যাটাস সিম্বল মনে করে :)। পোস্টকার্ড সাইজ ফটো হচ্ছে 6"x4"। ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়োজন ছাড়া এর থেকে বড় প্রিন্ট কেউ করে না। 7"x5" ফটো কোয়ালিটি প্রিন্টের জন্য ৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাই যথেষ্ট!


২। Lens: লেনস ডিজিটাল ক্যামেরার ২য় গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। Nikkon, Canon, Olympus কোম্পানীগুলো নিজেরাই লেন্স প্রস্তুত করে, আবার Sony, Casio, Panasonic কোম্পানীগুলো থার্ড পার্টির লেন্স ব্যবহার করে।


৩। Zoom: লেন্সের Zoom ক্ষমতা ক্যমেরার গুরুত্বপূর্ণ ফিচার। 'জুম ইন' করার অর্থ হচ্ছে দুরের বস্তুকে লেন্সের সাহায্যে দৃশ্যত কাছে টেনে আনা, আর 'জুম আউট' করার অর্থ হচ্ছে কাছের বস্তুকে লেন্সের সাহায্যে দৃশ্যত দুরে ঠেলে দেয়া। জুম দুই প্রকারের: অপটিক্যাল জুম ও ডিজিটাল জুম। অপটিক্যাল জুম করার ক্ষেত্রে ক্যামেরা ব্যবহার করে লেন্স। অর্থাৎ লেন্সের সাহায্যে বস্তুকে ছোটবড় করবে যেখানে ছবির কোয়ালিটি একই থাকবে। ডিজিটাল জুমের সাথে বস্তু বা লেন্সের কোন সম্পর্ক নেই। এখানে ডিজিটাল প্রসেসে ছবির কোন অংশকে বড় করে দেখানো হয় এবং ছবির কোয়ালিটি হ্রাস পায়। উদাহরণ: গ্রাফিক প্রোগ্রামে ছবিকে যত বেশি জুম ইন করা হয়, ছবি ততবেশি ঝাপসা হয়ে যায়।

সুতরাং সাবধান, ক্যমেরার ডিজিটাল জুম দেখে প্ররোচিত হবেন না, লক্ষ্য করবেন অপটিক্যাল জুম ক্ষমতা কত। যত বেশি জুম থাকবে তত বেশি দুরত্বের ছবি তোলা যাবে। অপটিক্যাল জুম ক্ষমতাকে অনেক সময় ফোকাল লেনথ্‌ দিয়েও প্রকাশ করা হয়। যেমন: 5.8-17.4mm, 35-105mm ইত্যাদি। শেষের সংখ্যাকে প্রথম সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে অপটিক্যাল জুম ক্ষমতা বের হয়। 105/35=3। অর্থাৎ 3X Optical Zoom। শাব্দিক অর্থে ফোকাল লেনথ্‌ হচ্ছে লেন্স থেকে সেনসরের দুরত্ব।

৪। Focusing Range: লেন্স কতদুরের এবং কত কাছের বস্তুর ছবি তুলতে পারে তা Focusing Range দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বেশির ভাগ ক্যামেরা অসীম (infinity) দুরত্বের বস্তুর ছবি তুলতে পারে, সুতরাং কত কাছের বস্তুর ছবি (Macro) তুলতে পারে সেটাই উল্লেখযোগ্য। যেমন: 1.6 ft (0.5 m) to infinity (wide), 3.28 ft (1.0 m) to infinity (telephoto), 8 in. (0.2 m) (close-up) ইত্যাদি।

৫। Aperture: লেন্সের Iris Diaphragm কে কতটুকু খোলা যায় উল্লেখ করার জন্য Aperture শব্দটি ব্যবহার হয়। লেন্সের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশের নিয়ন্ত্রণের জন্য Iris Diaphragm বা গোল আকৃতির ছিদ্রকে Aperture ছোট/বড় করে। এর মাধ্যমে লেন্সে প্রবেশকৃত আলোর পরিমান বাড়ানো কমানো হয়। f/# সংখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সাইজের এপারচার বোঝানো হয়। সংখ্যা যত বড় হবে আলো প্রবেশের পথ তত ছোট হবে।
 
৬। Shutter Speed: লেন্স ও সেনসরের মাঝখানে আলো ঠেকানোর আবরণকে বলে শাটার। এটি আলো আটকে রাখার কাজ করে। লেন্সের মধ্য দিয়ে আসা আলো সেনসরে প্রবেশের জন্য এটি খুলে দিতে হয়। ছবি তোলার সময় অর্থাৎ Shutter release button চাপার সাথে সাথে এই শাটার অল্পক্ষণের জন্য খুলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। শাটার স্পিড হচ্ছে লেন্স ও সেনসরের মাঝখানে আলো ঠেকানোর আবরণটি (শাটার) খুলে যাওয়া এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ার টাইম গ্যাপ। অর্থাৎ আবরণটি কতক্ষণ খোলা থাকবে তা নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারনত এই সময়টি এক সেকেন্ডেরও কম হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশিও হতে পারে। শাটার স্পিডকে 1/90, 1/125, 1/250, 1/500, 1/1000, 1/1500 সেকেন্ড হিসেবে প্রকাশ করা হয়। রাতের ও দিনের ছবির জন্য Aperture ও Shutter Speed ভিন্ন রকমের হয়।

৭। Exposure কন্ট্রোল: Aperture ও Shutter Speed এর যথার্থ সমন্বয়েই সম্ভব সুন্দর ছবি তোলা। শাটার স্পিড এবং এপারচারের সঠিক সমন্বয় না হলে ছবি “ওভার এক্সপোজ” (বেশি উজ্জ্বল) কিম্বা “আন্ডার এক্সপোজ” (বেশি কালো) হয়ে যাবে। সাধারণত প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা Aperture ও Shutter Speed ম্যানুয়েলি নিয়ন্ত্রণ করে ছবি তোলেন। কমপ্যাক্ট ক্যামেরা অটোমেটিক মুডে এগুলো নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে। তবে তা সবসময় পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে।
  ইদানীং বেশিরভাগ ক্যামরায় Pre-programmed Exposure Mode সেটিং করা থাকে, সেখান থাকে সিলেক্ট করেও কাজ চালানো যায়। যেমন: Landscape, Portrait, Sunset, Beach/Snow, Backlight, Macro, Night Scene, Fireworks, Panorama, Sports ইত্যাদি। যত বেশি মুড থাকবে তত বেশি সুবিধা।

৮। ISO (Sensitivity): এটি হচ্ছে একটি মাপ, যা বলে দেয় CCD বা CMOS সেনসর কতখানি সংবেদনশীল বা আলোর স্পর্শে কত তাড়াতাড়ি রিয়্যাক্ট করবে। Low ISO Rating -এর অর্থ এটা কম সংবেদনশীল অর্থাৎ যথার্থ এক্সপোজারের জন্য বেশি আলোর প্রয়োজন হবে। High ISO Rating -এর বেলায় হবে ঠিক উল্টো। সাধারণত ISO 100 - ISO 400 ব্যবহার হয় বেশি। ISO Rating যত বেশি হবে ক্যামেরা কম আলোর ছবি তত বেশি ভালো তুলতে পারবে।

৯। Imaze Stabilazator: খুবই প্রয়োজনীয় একটি ফিচার। এক্সপোজারের সময় ক্যামেরা কাঁপলে ছবি ঝাপসা হয়। এই সমস্যাকে কমিয়ে আনার জন্য image stabilization অথবা vibration reduction systems। এক্সপোজারের সময় ক্যামেরা কাঁপলে সেনসর নিজেই সামান্য স্থান পরিবর্তন করে সেটা ব্যালেন্স করে নেয়। জুমের মত এখানেও Optical Stabilazator গুরুত্বপূর্ণ, ডিজিটাল নয়।

১০। Viewfinder/LCD Display: যে ব্স্তু বা ব্যক্তির ছবি তুলব তা আমরা ভিউফাইন্ডারের মাধ্যমেই দেখি। আমরা যে দৃশ্যের ছবি তুলবো সেটা ফ্রেমের মধ্যে কেমন দেখাচ্ছে তা ভিউফাইন্ডারের মাধ্যমে অথবা এলসিডি ডিসপ্লেতে দেখে সন্তুষ্ট হলেই শাটার বাটন চাপ দিয়ে ছবি তুলি। এছাড়া ছবি তোলার পর ডিসপ্লেতে দেখতে পারি ছবিটি ভালো হয়েছে কিনা, নাহলে ডিলিট করতে পারি। সুর্যের প্রকট আলোতে ডিসপ্লের পরিবর্তে ভিউফাইন্ডার ভালো। সুতরাং ভিউফাইন্ডার ও ডিসপ্লে দুটিই প্রয়োজনীয়। ডিসপ্লের ব্যবহারে ব্যাটারী তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ডিসপ্লে কমপক্ষে ৩ ইঞ্চি (কোনাকুনি দৈর্ঘ্য) হওয়া উচিত।

১১। Autofocus: ছবি তোলার সময় আমরা লেন্সকে জুম ইন বা জুম আউট করে অথবা নিজে ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন দিকে মুভ করে ভিউফাইন্ডার/ডিসপ্লেতে দেখি কোন পজিশনে ছবিটি ফোকাস পয়েন্টে আসে। এই কাজটি লেন্সকে আগে পিছে মুভ করে ক্যামেরা নিজে নিজে করাকেই বলে অটোফোকাস।

১২। White Balance: ছবি থেকে অবাস্তব রঙের প্রভাব দুর করে বাস্তবসম্মত সাদা করার প্রসেসকে বলে হোয়াইট ব্যাল্যান্স। বিশেষ করে যেখানে সাদার প্রধান্য বেশি সেসব ক্ষেত্রে যদি ফ্লোরোসেন্ট বাতি জালানো হয় তখন সাদার মধ্যে একটি নীলাভ আভা প্রতিপলিত হয় যা ছবির কালারকে অবাস্তব করে তোলে।


১৩। Flash: সাধারণত কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরার built-in flash ৩-৫ মিটার দুরত্ব কভার করে। অন, অফ, অটো ছাড়াও ফ্লাশ লাইটেরও আবার বিভিন্ন মুড থাকে যা ক্যামেরার ইউজার ম্যানুয়েল দেখে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। কিছু ক্যামেরায় Infrared sensor থাকে যার মাধ্যমে ক্যামেরা ও ছবির টার্গেটের দুরত্ব নির্ণয় করে ফ্লাশ এডজাস্ট হয়ে যায়। অনেক ক্যামেরায় আবার External Flash Unit ব্যবহারের সুযোগ থাকে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসএলআর ক্যামেরার বেলায়।

১৪। Red Eye Reduction: মানুষ বা জীব-জন্তুর ছবিতে অনেকসময় দেখা যায় চোখের রেটিনা লাল বর্ণের হয়ে গেছে। শটের সময় ফ্লাশের আলো সামান্য কোণ সৃষ্টি করে লেন্সে ফিরে আসে। চোখের রেটিনা হল আয়নার মত। কমপ্যাক্ট ক্যামেরায় ফ্লাশ লাইট ও লেন্সের অবস্থান খুবই কাছাকাছি। পোট্রেইট বা ক্লুজ আপ শট নেওয়ার সময় ফ্লাশ লাইটের আলো যখন রেটিনা থেকে প্রতিপলিত হয়ে সোজাসুজি লেন্সে চলে আসে তখনই রেটিনার ছবি লাল হয়। এই সমস্যাকে এড়ানোর জন্য Red-Eye Reduction Flash Mode।


১৫। Continuous Shot Function: দ্রুত গতিতে চলমান কোন বস্তু (গাড়ি) বা ব্যক্তির (খেলোয়াড়) ছবি তোলার জন্য Continuous Shooting বা Burst Mode। এই মুডে শাটার বাটন পুরো চাপ দিলে ক্যামেরা পরপর অনেকগুলো ছবির (সিরিজ) শট নেবে এবং সাথে সাথে মেমরিতে সেভ করবে। সেখান থেকে দেখে সবচেয়ে ভালো ছবিটি রেখে বাকীগুলো ডিলিট করতে পারেন। ভালো ক্যামেরায় সিরিজে ছবির সংখ্যা বেশি হয় ও ছবি রেকর্ডের গতি দ্রুত হয়।

১৬। Video with sound: সাউন্ডসহ ভিডিও করার ফিচার। এটা কখনও ভিডিও ক্যামেরার সমতুল্য নয়, শুধু কয়েক মিনিটের ভিডিও ক্লিপ। কোন বিশেষ মুহুর্তকে রেকর্ড করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি ফিচার।

১৭। File Format: প্রায় সব ক্যামেরাই তিন ধরনের ফাইল ফরমাট সাপোর্ট করে: JFEG, TIFF এবং RAW। JFEG (ডিফল্ট ফরমাট) কমপ্রেশন ফরমাট অর্থাৎ ফাইলের সাইজ ছোট করার জন্য ছবির অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ দেয়া হয়। TIFF ফরমাটেও কমপ্রেস হয় তবে ছবির কোন তথ্য বাদ দেয় না। ফাইল সাইজ বড় হয়। RAW ফরমাটে কোন কমপ্রেস হয় না, ছবির সম্পুর্ণ ডিজিটাল নেগেটিভ।

১৮। Storage Media: ডিজিটাল ক্যামেরার সাথে যে মামোরি (12 MB - 32 MB) দেয়া হয় তা খুবই অল্প। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলাদাভাবে মেমোরি কিনতে হয়। সুতরাং ক্যামেরা কেনার আগে দেখা উচিত কোন ধরনের মেমোরি কার্ড কিনতে হবে। তার দাম কেমন ও সহজলভ্য কিনা। উল্লেখযোগ্য মেমোরি কার্ড CompactFlash, Secure Digital, SDHC, xD Picture, Memory Stick, MicroDrive, and SmartMedia. তবে SD ও SDHC কার্ড হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও সহজলভ্য কার্ড। সাধারণত 2GB - 4GB মেমোরি যথেষ্ট। ছবি পেন ড্রাইভ বা সিডিতে কপি করে মেমোরি খালি করলেই হয়ে যায়। সাধারণত 4GB মেমোরিতে 10 MP ক্যামেরায় JFEG ফরমাটের প্রায় ১১৫০ টি ছবি ও 8 MP ক্যামেরায় ১৪৫০টি ছবি সেভ করা যায়।

১৯। Power Sources: ডিজিটাল ক্যামেরার বহুমুখী ফাংশন ও এলসিডি ডিসপ্রের জন্য যথেষ্ট বিদুৎ প্রয়োজন। সুতরাং রিসার্জেবল ব্যাটারীর কোন বিকল্প নেই। সাধারণত ব্যাটারীর অপশন তিন রকমের হয়ে থাকে।
ক) Lithium Ion ব্যাটারী, এটি ক্যামেরার সাথেই থাকে এবং ক্যামেরাসহ চার্জ করতে হয়। অবিকল মোবাইল ফোনের মত। নতুন ব্যাটারীকে প্রথমবার ৮-১২ ঘন্টা চার্জে রেখে পূর্ণ চার্জ করা ভালো (ম্যানুয়েল দ্রষ্টব্য)। বিভিন্ন ক্যামেরার ব্যাটারীর সাইজ ও মডেল বিভিন্ন রকমের হয়। অনেকদিন ব্যবহারের পর ব্যাটারীর চার্জ বেশিক্ষণ থাকে না। যারা ক্যামেরা নিয়মিত ব্যবহার করেন সম্ভব হলে তাদের একটা রিজার্ভ ব্যাটারী কিনে নেয়া ভালো।
খ) সার্জারসহ Lithium Ion ব্যাটারী, সবকিছু উপরের মতই, শুধু পার্থক্য হচ্ছে আলাদা একটি চার্জার থাকে, ব্যাটারী ক্যামেরা থেকে বের করে এই চার্জারে রেখে চার্জ করতে হয়। সুবিধা হল, একটা এক্সট্রা ব্যাটারী কিনলে একটা স্ট্যান্ড বাই চার্জে রেখে আরেকটা দিয়ে ক্যামেরার কাজ চালানো যায়।
গ) Rechargeble AA NiMh (পেন্সিল ব্যাটারী)। এ অপশনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাটারী ও চার্জার আলাদাভাবে নিজেকে কিনতে হয়। ব্যাটারীর চার্জের ক্ষমতা mAh বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

২০। Interfaces: সব ক্যামেরার সাথে USB ক্যাবল থাকে। অনেক ক্যামেরার সাথে টিভি কানেকটিং কেবল থাকে যাতে ক্যামেরার ছবি সরাসরি টিভিতে দেখা যায়।

২১। Self-timer option: কোন বিশেষ দৃশ্যে বা কোন গ্রুপের সাথে নিজের ছবি তুলতে এই অপশন। ক্যামেরাকে ট্রাইপড বা স্টাবিল কোন কিছুর উপরে রেখে দৃশ্য নির্বাচন করে এই অপশনটি নির্বাচন করে আপনি সেখানে গিয়ে দাড়াঁন। ৫-১০ সেকেন্ড পর ক্যামেরা নিজেই শট নেবে।

২২। Photo Editing Software: সব ক্যামরার সাথে একটি ফ্রি ফটো এডিটিং সফটওয়্যার দেয়া হয়। কোনটা পাওয়ারফুল আবার কোনটা সিম্পল। এই প্রোগ্রাম কমপিউটারে ইনস্টল করে ফটো এডিটের কাজ করা যায়।

২৩। In-Camera Photo Editing: ইদানিং লেটেস্ট মডেলের ক্যামেরায় In-Camera Photo Editing টুলস থাকে। এই টুলস দিয়ে ক্যামেরার ডিসপ্লেতে ছবির বেসিক এডিটিং করা যায়। যেমন: ছবির আলো/কনট্রাস্ট কমানো-বাড়ানো, সাইজ ছোট করা, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া, ক্লোজ আপ করা ইত্যাদি।

ক্যামেরা কেনার আগে
এক জনের পছন্দ ও প্রায়োরিটির সাথে আরেক জনের মিল নেই। উল্লেখিত ফিচার/ফাংশন দেখে এখন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন ধরণের ক্যামেরা আপনার দরকার, সে ক্যামেরাতে কি কি ফিচার অবশ্যই থাকা চাই এবং কোন ফিচার থাকলে ভালো, না থাকলেও চলে ইত্যাদি। যারা অনেকদিন ধরে ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করে তাদের থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন: মেগাপিক্সেল কত হবে, অপটিক্যাল জুম কত, ডিসপ্লের সাইজ এবং আপনার বাজেট। এরপর পছন্দনীয় ফিচার/ফাংশনগুলোর একটি তালিকা করুন। শুধুমাত্র ব্রান্ডের নাম দেখে পছন্দ করবেন না, ইদানিং লিডিং সব কোম্পানীর ক্যামেরার মানই ভালো। এবার আপনার কাঙ্খিত ক্যামেরাটি নিম্নলিখিত সাইটগুলোতে গিয়ে খুঁজে দেখুন:
১। DigiCam Resource Page
২। Imaging Resource
৩। Digital Camera Info
৪। PriceRunner
এছাড়া ক্যামেরা নির্মাতা কোম্পানীর ওয়েবসাইটে গিয়েও দেখতে পারেন। একেবারে ১০০% আপনার মনের মত পাবেন তেমন কোন নিশ্চয়তা নেই, সেক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো কিছুটা আপোষ করতে হবে। যদি কোন ক্যামেরা পছন্দ হয়, ব্রান্ড ও মডেলের পূর্ণনাম ও ফিচারগুলো নোট করুন। বিভিন্ন রিভিউ সাইটে গিয়ে দেখতে পারেন আপনার পছন্দের ক্যামেরা সম্পর্কে এক্সপার্টরা কী বলে। এবার দোকানে গিয়ে ক্যামেরাটি ভালোভাবে দেখে সবকিছু (দাম, সার্ভিস, গ্যারান্টি, প্যাকেজের অন্যান্য উপকরন) পছন্দ হলে কিনে নিন। অভিনন্দন!
বিভিন্ন দোকানের মধ্যে দামের তেমন একটা পার্থক্য হয় না। কয়েকশ টাকা বাচাঁনোর জন্য এমন দোকান থেকে কিনবেন না যেখানে পরে ক্যামেরার কোন সমস্যা নিয়ে গেলে ওরা আপনাকে আর চিনবে না!

ক্যামেরা কেনার পরে
এক্ষেত্রে আমরা সবাই যে ভুলটা করি তা হচ্ছে অদম্য কিউরিসিটি! তাড়াতাড়ি প্যাকেট খুলে জেনে বা না-জেনে বিভিন্ন বাটন বা অপশন নিয়ে টিপাটিপি। তরতাজা নতুন ক্যামেরাটির এখন ল্যাবরেটরির অসহায় গিনিপিগের মত অবস্থা! প্রথমে ক্যামেরার সাথে যা যা থাকার কথা সবকিছু আছে কিনা দেখুন। তারপর ৩০টি মিনিট ধৈর্য ধরে প্যাকেটের ইউজার গাইড / ম্যানুয়েলটি পড়ুন। ইদানিং PDF ফরমাটে সিডিতে ম্যানুয়েল দেয়া হয় যা কমপিউটারে পড়তে হবে। সেখানকার নির্দেশ অনুসারে প্রাথমিক সংযোজন শেষ করে আপনার ক্যামেরার সাথে পরিচিত হউন। কোন বাটন কী কাজ করে ও কোন অপশনটি কোন মেনুতে গেলে পাবেন ইত্যাদি জেনে আপনার প্রিয়তম মানুষটির শট নিয়েই experiment শুরু করুন। ডিজিটাল ক্যামেরার জগতে আপনাকে স্বাগতম!

অটোমুডে ছবি তোলা কমপাক্ট ক্যামেরার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অপশন।
১) ক্যামেরা অন করে অটো মুড নির্বাচন করুন।
২) দৃশ্যের গুরুত্বপূর্ণ বস্তু/ব্যক্তিকে ভিউফাইন্ডার/মনিটরের মাধ্যমে ফোকাস এরিয়াতে (সেন্টার পয়েন্ট) কম্পোজ করুন।
৩) শাটার বাটনকে অর্ধেক (উচ্চতার ৫০%) চাপ দিয়ে এ জায়গায় স্থির রাখুন। ক্যামেরা এখন আপনার নির্বাচিত দৃশ্যের ছবির জন্য প্রোগ্রাম সেটিং করবে। যখন দেখবেন কম্পোজ ফ্রেমের রং পরিবর্তন হয়েছে বা একটা বিপ দিয়েছে, তার অর্থ ক্যামেরা রেডি।
৪) এখন শাটার বাটনের বাকী অর্ধেক চাপ দিন। ক্যামেরা ছবিটি উঠিয়ে মেমোরিতে সেভ করবে। ঠিক এই মুহুর্তে ক্যামেরা একটি বিপ দিতে পারে।
৫) ভিউ/প্লে অপশন নির্বাচন করে ছবিটি মনিটরে দেখতে পারেন।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় ও অবস্থানের ছবির জন্য সরাসরি প্রি-প্রোগ্রাম সীন মুড থেকে অপশন সিলেক্ট করবেন যদি সে ধরনের মুড থাকে। এতে ক্যামেরার জন্য কম্পোজ করা সহজ হয়।

শেষ কথা
প্রযুক্তির বেলায় শেষ কথা বলতে কিছু নেই। Face Detection, Blink detection, Smart Auto scene selection ইত্যাদি নতুন নতুন ফিচার নিয়ে নতুন মডেলের ক্যামেরা বাজারে আসছে, আসবে। তবে ভালো ছবির ব্যাপারে শেষ কথা হচ্ছে, ভালো ছবি শুধু ক্যামেরার জন্য হয় না, এর জন্য প্রয়োজন ক্যামেরার পিছনে একজন দক্ষ মানুষ। চেষ্টা ও প্রাকটিসই একজন মানুষকে দক্ষ করতে পারে। এজন্য ডিজিটাল ক্যামেরা পারফেক্ট। বিভিন্নভাবে এক্সপেরিমেন্ট করুন, ছবি ভালো না হলে ডিলিট করুন, অতিরিক্ত কোন খরচ নেই। আপনার ক্যামেরায় যেসব ফিচার/ফাংশন আছে সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। ডিজিটাল ক্যামেরা আপনার জীবনের মধুরতম স্মৃতি ও গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলো স্বপ্নীল এলবামে সাজিয়ে রেখে আগামী দিনগুলোকে আরো অর্থময় ও আনন্দময় করুক - এই প্রত্যাশা রেখে লেখাটি শেষ করলাম।

তথ্য ও ছবিসূত্র:

40 Digital Photography Techniques by John Kim
ইন্টারনেট ও পত্র-পত্রিকা

No comments:

Post a Comment